বর্তমান এই তথ্য প্রযুক্তির যুগে আপনি যদি অনলাইন থেকে ইনকাম করতে চান, তাহলে অনেক মাধ্যম পাবেন। এই সকল মাধমের মধ্যে একটি বহু পরিচিত মাধ্যম হলো এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং। এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং আপানার জন্য হতে পারে একটি সুবর্ণ সুযোগ। যদি আপনি ঘরে বসেই অনলাইন এর মাধ্যমে ইনকাম করতে চান। আজকের এই আর্টিকেল এ আমরা এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং নিয়ে বিস্তারিত কথা বলব।

আপনি এ্যাফিলেট মার্কেটিং করে কমিশন এর মাধমেও ইন্টারনেট থেকে টাকা আয় করতে পারবেন। এ্যাফিলেট মার্কেটিং যে কোন বিজনেস এর পণ্য বা সেবার বিক্রি অনেক টাই বাড়িয়ে দেয় আর এর জন্যই তখন এই বাড়তি বিক্রির জন্য কমিশন প্রদান করে থাকে। আর এই কমিশন মূলত একটা নির্দিষ্ট রেশিওর উপর নির্ভর করে প্রদান করে থাকে। যেহেতু এ্যাফিলেট মার্কেটিং বিক্রিয় বারাতে সহায়াতা করে থাকে তাই যে কোন বিজনেস এর জন্য এ্যাফিলেট মার্কেটিং খুবী গুরুত্ত পূর্ণ। তাই আজকে আমরা এ্যাফিলেট মার্কেটিং সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। আসুন শুরু করি।
এ্যাফিলেট মার্কেটিং কী?
এ্যাফিলেট মার্কেটিং হলো এমন একটি মাধ্যম বা প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে আপনি অন্য কোন বেক্তি বা অন্য কোন কোম্পানির পণ্য কিংবা সেবা বিক্রি করে একটি নির্দিষ্ট পরিমান কমিশন/টাকা আয় করতে পারবেন। আমি যদি সহজ ভাবে বলি তাহলে আপনি একজন মধ্যস্থতাকারী হিসাবে কাজ করবেন। একজন ক্রেতা এবং একজন বিক্রেতার মাঝে। আপনি প্রতি একটা বিক্রির জন্য টাকা পাবেন।
এ্যাফিলেট মার্কেটিং এর মডেলটা কি ভাবে কাজ করে?
১. প্রথম স্টেপঃ আপনি যদি একজন সফল এ্যাফিলেট মার্কেটার হতে চান তাহলে আপনার কাছে সম্ভাব্য ক্রেতাদের একটি ইমেইল লিস্ট থাকতে হবে, না হলে একটি ওয়েবসাইট থাকতে হবে, কিংবা একটি ব্লগ থাকতে হবে অথবা বলতে পারেন এমন একটি মাধ্যম আপনার কাছে থাকতে হবে যার মাধ্যমে আপনি আপনার এ্যাফিলেট লিংক টি সম্ভাব্য ক্রেতাদের কাছে পোছাতে পারবেন।
২. দ্বিতীয় স্টেপঃ এখন আপনার দ্বিতীয় যে কাজ টা হোল ভালো একটা কোম্পানি খুজে বের করা। যার প্রোডাক্ট বা সেবা ভালো এবং যে ভালো কমিশন প্রদান করে। আর অবশই তার এ্যাফিলেট প্রোগ্রাম থাকতে হবে। তার পড়ে আপনি সেই কোম্পানির সাথে এ্যাফিলেট প্রগ্রামে যোগ দিবেন। তার পড়ে আপনি সেই কোম্পানির ওয়েবসাইট এর সকল পণ্য এর মধ্য থেকে সব থেকে বেশি যে পণ্য গুলো বিক্রি হছে বা ট্রেনড এ যে পণ্য গুলো আছে এমন পণ্য গুলো নির্বাচন করবেন। তার পড়ে সেই সকম পণ্য এর এ্যাফিলেট লিংক তৈরি বা জেনারেট করবেন।
3. তৃতীয় স্টেপঃ আপনি পূর্বে যে এ্যাফিলেট লিংক গুলো তৈরি করেছেন এখন এই পর্যায় এসে সেই সকল লিংক প্রচার করতে হবে। সম্ভাব্য ক্রেতাদের কাছে এই লিংক গুলো পোছাতে হবে। এই কাজটি করার জন্য আপনি একটা ওয়েবসাইট খুলে নিতে পারেন সেখানে এই সব পণ্য গুলো পাবলিশ করতে পারেন আর অর্ডার নাও বাটনে আপনার পণ্য টির এ্যাফিলেট লিংক দিয়ে দিতে পারেন কেও যদি অর্ডার নাও বাটন এ ক্লিক করে তাহলে মাইন ওয়েবসাইট এ চলে যাবে আর সেখান থেকে কিছু কিনলে আপনি কমিশন পাবনে।
আপনি চাইলে আপনার এই পণ্য সম্পর্কে বিভিন্ন ব্লগ সাইট এ গিয়া রিভিও লিখতে পারেন আর কেনার জন্য আপনার এ্যাফিলেট লিংক দিয়ে দিতে পারেন আপনার রিভিও আর্টিকেল এর নিচে। সেখানে ক্লিক করেও যদি কেও পণ্য টি ক্রয় করে তাহলেও আপনি কমিশন পাবনে। আর যদি এমন হয় কোন একজন ক্রেতা আজকে আপনার লিংক এ ক্লিক করল কিন্তু ক্রয় করল না। দুই তিন দিন পড়ে সে আসে ক্রয় করল তাহলেও আপনি সেই বিক্রির জন্য কমিশন পাবেন। কারন ওয়েবসাইট গুলো সাত দিন বা তার বেসিও টাইম দিয়ে থাকে এর মধ্যে ক্রয় করলেও আমার কমিশন আপনি পেয়ে জাবেন।
আপনি চাইলে ইউটিউব ভিডিও, ফেসবুক পোস্ট, লিংকড ইন পোস্ট ইতাদির মাধমেও আপনার পণ্য টির এ্যাফিলেট লিংক প্রচার করতে পারবেন। বর্তমানে সকলেই আর্টিকেল পরার থেকে ভিডিও বেশি দেখে তাই আপনি যদি ব্লগ পোস্ট এর জায়গায় অই পণ্য নিয়ে একটা রিভিও ভিডিও তৈরি করতে পারেন তাহলে অবশই ব্লগ পোস্ট এর থেকে বেশি বিক্রি করতে পারবেন এবং বেশি টাকা ইনকাম করতে পারবেন। এইখানে কথা একটাই আপনি বিক্রি করে দিতে পারলে কমিশন পাবেন।

৪. চতুথ এবং সর্ব শেষ ধাপঃ আপনি আপনার এ্যাফিলেট লিংক প্রচার করলেন বিক্রি করলেন এবং তার জন্য কমিশন ও পেলেন। এখন কি করবেন। এখন সেই টাকা তুলতে হবে না? হা এখন আমরা জানবো কি করে আপনি আপনার কমিশন এর টাকা তুলতে পারবেন। সাধারণত সকল কোম্পানির একটা নির্দিষ্ট পে আউট লিমিট থাকে। এখন ধরে নিলাম আপনার কোম্পানির পে আউট লিমিট হোল ১০ ডলার। মানে আমি যদি মিনিমাম ১০ ডলার কমিশ পান তাহলেই কেবল আপনি আপনার সেই কাখিত কমিশন এর টাকা তুলতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনি আপানর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আপনার এ্যাফিলেট অ্যাকাউন্ট এর সাথে সংযোগ করে দিয়ে উত্তলন এর জন্য আবেদন করলে আপনার কোম্পানি আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এ সেই ডলার পাঠিয়ে দিবে। তার পর আপনি যে কোন এটিএম বুথ থেকে আপনার অর্জিত টাকা আপনি তুলতে পারবেন।
এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিংয়ের সুবিধা গুলো কি কি ?
এ্যাফিলেট মার্কেটিং এর ক্ষেত্রে আমরা অনেক সুবিধা পেয়ে থাকি নিচে সেগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো ঃ
১. বিনিয়োগ লাগে নাঃ এ্যাফিলেট মার্কেটিং শুরু করতে যেহেতু নিজের কোন পণ্য কিনতে হয় না। তাই বিনিয়োগ এর প্রয়োজন পড়ে না। আপনার যদি একটি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম থাকে তাহলেই আপনি শুরু করতে পারবেন।
২. সময় এর বাঁধা নেইঃ এ্যাফিলেট মার্কেটিং এর কাজ আপনি যখন খুশি করতে পারবেন। আপনি আপনার সুবিধা মত সময়ে কাজ করতে পারবেন। এতে কোন সমস্যা নেই।
৩. প্যাসিভ ইনকামঃ এ্যাফিলেট মার্কেটিং এর কাজ যদি একবার আপনি ভালো ভাবে করেন। তাহলে দেখবেন সেইখান থেকে আপনার রেগুলারি আয় আসতে থাকবে।
৪. বিভিন্ন রকম কাজের সুযোগঃ এ্যাফিলেট মার্কেটিং এর মাধ্যমে আপনি নানা রকম পণ্য বা সেবা নিয়ে কাজ করতে পারবেন। হতে পারে সেটা আইটি, পোশাক, হেলথ, শিক্ষা ইত্যাদি।
জনপ্রিয় কিছু এ্যাফিলেট মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম এর নাম নিচে দেওয়া হলো
১. অ্যামাজন এ্যাফিলেট – বিশ্বখ্যাত একটি এ্যাফিলেট মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম হলো অ্যামাজন। বর্তমানে অনেকেই অ্যামাজন এর সাথে বিজনেস করছেন এবং ভালো টাকা আয় করছেন।
২. দারাজ (বাংলাদেশ)- বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় এ্যাফিলেট প্ল্যাটফর্ম দারাজ।
৩. ক্লিক বাংক- ডিজিটাল পণ্য এর ক্ষেত্রে সব থেকে জনপ্রিয় হলো ক্লিক বাংক।
বাংলাদেশ এ এ্যাফিলেট মার্কেটিং এর সম্ভাবনা কি ঃ
যত দিন যাচ্ছে বাংলাদেশে ই-কমার্স ও অনলাইন বিজনেস দিন দিন বেরে চলেছে। যার ফলে এ্যাফিলেট মার্কেটিং এর সম্ভাবনাও দিন দিন বাড়ছে। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন অনেকেই এখন এ্যাফিলেট মার্কেটিং কে ফুল্ টাইম কাজ বা তাঁর ক্যারিয়ার হিসেবে নিয়েছে। বাংলাদেশে দারাজ, পিকাব, বিডি শপ এরে মত অনলাইন বিজনেস কোম্পানি এ্যাফিলেট প্রোগ্রাম চালু করেছে। আপনি চাইলে দেশিও কোম্পানির সাথেও কাজ করতে পারেবেন।
আপনি কি ভাবে এ্যাফিলেট মার্কেটিং শুরু করবেন?
১. একটি পণ্য বা নিস বেছে নিনঃ আপনাকে প্রথমেই একটি নিস বেছে নিতে হবে। আপনি কোন পণ্য বিক্রি করবেন সেটা। হতে পারে স্পোর্ট, ট্রাভেল, আইটি ইত্যাদি।
২. অনলাইন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরিঃ আপনার পণ্য বা সেবা প্রচারের জন্য আপনার একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্ম থাকতে হবে। হতে পারে সেটা ফেসবুক পেইজ, ইউটিউব চ্যানেল, ব্লগ, ওয়েবসাইট ইত্যাদি। এর মাধ্যমে আপনি পণ্য বা সেবা গুলো প্রচার করবেন।
৩. এ্যাফিলেট অ্যাকাউন্টঃ আপনাকে যে কোন কোম্পানির এ্যাফিলেট প্রগ্রামে যোগ দিতে হবে। কোম্পানির ওয়েবসাইট এ গেলেই আপনি এ্যাফিলেট প্রগ্রামের জন্য আবেদনের লিংক পানেব। সেখান থেকে আপনাকে আবেদন করতে হবে।
৪. আপনাকে কন্টেন্ট তৈরি করতে হবেঃ আপনি যে পণ্য বা সেবা বিক্রি করবেন এর জন্য আপনাকে ভালো মানের চন্তেন্ত বানাতে হবে। হতে পারে সেটা কোন ব্লগ পোস্ট/ আর্টিকেল, ইউটিউব ভিডিও, ফেসবুক পোস্ট ইত্যাদি। সেই ক্ষেত্রে একটা কথা সব সময় মনে রাখবেন। আপনার মুল লক্ষ্য হবে ক্রেতাকে সাহায্য করা তাঁর সমস্যা সমাধান করা।
৫. ভিজিটরঃ আপনি যখন কিছু বিক্রি করতে চাইবেন তখন সেই প্রোডাক্ট বেশি লকের কাছে দেখাতে হবে। তাই আপনার ওয়েবসাইট, ফেসবুক পেইজ, ইউটিউব চ্যানেল যাই থাকুক না কেন। সেখানে প্রচুর পরিমান ভিজিটর আনতে হবে।

সফল হবার জন্য কিছু টিপস
১. বিশ্বস্ততা বজায় রাখতে হবে সব সময়। কোন মিথা ইনফর্মেশন বা খারাপ পণ্য দেবেন না। সব সময় সঠিক তথ্য আর ভালো পণ্য বিক্রি করবেন।
২. আপানেক প্রতি দিনি কন্টেন্ট দিতে হবে না হলে ভিজিটর আসবে না।
৩. সব থেকে বেশি গুরুত্ত দিবেন ভিডিও কন্টেন্ট এ। কারন মানুষ এখন আর্টিকেল পরার থেকে ভিডিও দেখতে বেশি পছন্দ করে।
৪. আপনি একটি ইমেইল বা ফোন নুম্বার এর লিস্ট বানাতে পারেন। এর মাধ্যমে আগ্রহি ক্রেতাদের ফলোআপ করতে পারবেন।
শুরুতেই আপনার আয় নাও আসতে পারে। এতে ভেঙ্গে পরলে চলবে না। আপনাকে আপনার কাজ চালিয়ে যেতে হবে। সফলতা আসবেই। কখনই কোন কোম্পানির প্রোডাক্ট প্রমশন করবেন না। এর ফলে অনেক সময় ক্রেতার বিশ্বাস হারতে হয়। আপনার এ্যাফিলেট লিংক ঠিক থাক কাজ করছে কি না চেক করুন।
আজকের আর্টিকেল এ আমরা এ্যাফিলেট মার্কেটিং নিয়ে একদম বেসিক থেকে শুরু করে আলোচনা করেছি। তবুও যদি আপনাদের কারো কোন কিছু বুজতে কোন সমস্যা হয় তাহলে অবশই আমাকে কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।
এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং সম্পর্কে কিছু কমন প্রশ্ন (FAQ)
১. এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে কি সত্যিই আয় করা যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, আপনি এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করতে পারবেন।
২. কোন কোন প্ল্যাটফর্মে এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করা যায়?
উত্তর: আপনি ব্লগ/ওয়েবসাইট, ইউটিউব, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টিকটক বা ইমেইলের মাধ্যমে এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারেন।
৩. মোবাইল দিয়ে কি এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করা যায়?
উত্তর: হ্যাঁ, আপনি চাইলে মোবাইল দিয়েও এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারবেন।
৪. এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং কি বৈধ?
উত্তর: হ্যাঁ, এটি একটি বৈধ ।
৫. আমি কি ছাত্র হয়েও এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করতে পারি?
উত্তর: অবশ্যই! ছাত্র-ছাত্রীরাও এ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করে আয় করতে পারে।
One comment