ড্রপশিপিং (Dropshipping) একটি ই-কমার্স ব্যবসার মডেল যেখানে আপনি নিজে কোনো পণ্য স্টক রাখেন না। অর্থাৎ, আপনি আপনার অনলাইন স্টোর বা সোশ্যাল মিডিয়া পেজে পণ্য সাজিয়ে বিক্রি করার পর, গ্রাহক অর্ডার করলে সরাসরি সু্যাপ্লায়ার (supplier) সেই পণ্য গ্রাহকের কাছে পাঠায়। আপনি শুধুই মধ্যবর্তী ভূমিকা রাখেন — পণ্য তালিকা, বিপণন, গ্রাহক সাপোর্ট।
এই মডেলের মূল সুবিধা হলো: কম ইনভেস্টমেন্ট বা প্রারম্ভিক পুঁজির প্রয়োজন, স্টক ম্যানেজমেন্ট করার ঝামেলা নেই।

বাংলাদেশের জন্য ড্রপশিপিং অর্থপূর্ণ কারণ:
- অনলাইন শপিং বাড়ছে এবং ই-কমার্স বেড়ে চলছে।
- স্থানীয় বা আন্তর্জাতিক সাপ্লায়ারদের সঙ্গে কাজ করে আপনি দ্রুত শুরু করতে পারেন।
- ঘরে বসে কম সময় দিয়ে অংশ-সময়সূচি অনুযায়ী ব্যবসা করা যায়, তাই শিক্ষার্থী, গৃহিণী, পার্ট-টাইম উদ্যোক্তাদের জন্য উপযোগী।
তবে শুধু সহজ হতে হবে না — সফল হতে হলে সঠিক পরিকল্পনা, সময় ও পরিশ্রম দরকার। নিচে ধাপে ধাপে শুরু থেকে সফলতা লাভের পথ দেওয়া হলো।
ধাপ ১: প্রস্তুতি ও মাইন্ডসেট
উদ্দেশ্য নির্ধারণ
প্রথমেই ঠিক করুন কেন আপনি ড্রপশিপিং করবেন — ধরা যাক আপনি “মাসিক আয় বাড়াতে চাই”, “পুরোপুরি নিজ উদ্যোক্তা হতে চাই” বা “পার্ট-টাইম ইনকাম করতে চাই”। স্পষ্ট উদ্দেশ্য থাকলে পরিকল্পনা স্পষ্ট হয়।
সময় ও মনোবল তৈরি করুন
ড্রপশিপিং কোনও এক-রাতে ধনী হওয়ার কৌশল নয়। শুরুতে সময় দিতে হবে — পণ্য খুঁজে, স্টোর সাজিয়ে, বিপণন চালিয়ে। অনেক początkuশুরুর সময়ে পরীক্ষামূলক ভুল হবে — >
“I tried setting up a Shopify store from my region, but ran into issues …”
এই মডেলের জন্য ধৈর্য ও নিরলসতা দরকার।
বাজেট ও রিসোর্স বিবেচনা
যদিও স্টক রাখার প্রয়োজন নেই, কিছু খরচ থাকবে — স্টোর সেটআপ খরচ, ট্রাফিক (বিজ্ঞাপন) খরচ, প্ল্যাটফর্ম ফি ইত্যাদি। উদাহরণস্বরূপ:
একটি ব্যবসায় ওয়েবসাইট, সাপ্লায়ার খরচ, মার্কেটিং খরচ মিলিয়ে খরচ পড়ে ৩১,০০০-৩২৮,০০০ টাকার মধ্যে হতে পারে। taskinkhalid.com
বাংলাদেশের ছোট বাজেটে খুব ধীরে শুরু করে লাভকে ধাপে ধাপে বাড়ানো ভালো।
ধাপ ২: নিস (নিচ) নির্বাচন
নিচ কী এবং কেন গুরুত্বপূর্ণ
“নিচ” হলো সেই বিশেষ পণ্য বা বাজার বিভাগ যা আপনি ফোকাস করবেন — যেমন ফ্যাশন একসেসরিজ, স্মার্ট গ্যাজেট, বেবি প্রোডাক্টস, বিউটি প্রোডাক্টস। ভালো নিচ নির্বাচন করলে প্রতিদ্বন্দ্বিতা কম হতে পারে এবং আপনি বিশেষ বাজারের গ্রাহকদের কাছে গিয়ে দাঁড়াতে পারেন।
নিচ নির্বাচন করার টিপস
- জনপ্রিয়তা ও চাহিদা বিশ্লেষণ করুন।
- প্রতিদ্বন্দ্বীরা কী করছে দেখুন — খুব ভিড়ে যাবে না এমন জায়গা বেছে নিন।
- নিজের আগ্রহ, দক্ষতা ও উৎসের কথা বিবেচনা করুন।
- বাংলাদেশের পরিবেশ বিবেচনায় নিন — যেমন সাপ্লাই চার্ট, ডেলিভারি সময়, ফেরত নীতি ইত্যাদি।
চেষ্টা করার জন্য কিছু নিচ’idée
- মোবাইল একসেসরিজ
- হোম ডেকর বা লিটল গ্যাজেটস
- বাচ্চাদের বা মা-বাবার জন্য পণ্য
- বিউটি ও স্কিন কেয়ার প্রোডাক্টস
প্রাথমিকভাবে একটি নিচে ফোকাস করে সেটআপ করলে, স্কেল-আপে সুবিধা হয়।
ধাপ ৩: সাপ্লায়ার খোঁজা ও পণ্য সূত্র
সাপ্লায়ার নির্বাচন
ভালো সাপ্লায়ার হল আপনার ব্যবসার ভিত্তি। কিছু বিষয় মাথায় রাখুন:
- সময়মতো ডেলিভারি দিতে পারবে কি না।
- পণ্যের গুণমান ঠিক আছে কি না।
- স্টক অবস্থা ও রিয়েল-টাইম আপডেট রয়েছে কি না।
- বাংলাদেশি গ্রাহক চাহিদা ও শিপিং সুবিধা বিবেচনায়।
উদাহরণস্বরূপ: Dropup Seller বাংলাদেশের সাপ্লায়ারদের সঙ্গে কাজের সুযোগ দেয়; কোনো ইনভেন্টরি ছাড়া ব্যবসা শুরু করা যায়।
কিছু জনপ্রিয় সাপ্লায়ার বা প্ল্যাটফর্ম
- আন্তর্জাতিক: AliExpress, Spocket — ড্রপশিপিং ফোকাসেড।
- স্থানীয়: DropShop, ShopBase BD — দ্রুত ডেলিভারি ও স্থানীয় সুবিধা।
পণ্যের তালিকা ও মূল্য নির্ধারণ
- সাপ্লায়ার প্রাইস + শিপিং খরচ + আপনার মুনাফা = আপনার বিক্রয়মূল্য।
- বাংলাদেশি বাজার ও টার্গেট গ্রাহকের অর্থসাহিত্য অনুযায়ী মূল্য ঠিক করুন।
- ভোট বা ট্রেন্ডেড পণ্য সনাক্ত করুন — সময়মতো ট্রেন্ড বেছে নেওয়া ব্যবসার জন্য বড় প্লাস।
- পণ্যের বিবরণ (description) ও ছবি (images) পেশাদারি মানের হওয়া উচিত — এটি SEO ও গ্রাহক বিশ্বাস বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
ধাপ ৪: আপনার অনলাইন স্টোর বা পেজ তৈরি
প্ল্যাটফর্ম নির্বাচন
আপনাকে নির্বাচন করতে হবে — কোন প্ল্যাটফর্মে আপনার স্টোর চালাবেন। কিছু অপশন:
- Shopify – সহজ ও জনপ্রিয়।
- WooCommerce (WordPress ভিত্তিক) – কাস্টমাইজ করার সুবিধা বেশি।
- স্থানীয় প্ল্যাটফর্ম যেমন ShopBase BD – যারা বাংলাদেশি সাপ্লায়ার ও গ্রাহক দিকে ফোকাস।
ওয়েবসাইট ডিজাইন ও SEO
- মোবাইল রেসপনসিভ ডিজাইন নিশ্চিত করুন — বাংলাদেশে মোবাইল ব্যবহার বেশি।
- দ্রুত লোডিং টাইম রাখুন, কারণ ধীর লোডে গ্রাহক চলে যেতে পারে।
- SEO-র জন্য প্রাথমিক বিষয়গুলো:
- পেইজ টাইটেল ও মেটা ডিসক্রিপশন লিখুন।
- কীবোর্ড রিসার্চ করুন — আপনার নিশ অনুযায়ী লোক কীভাবে খুঁজে।
- পণ্যের বিবরণ পরিষ্কার ও ইউনিক করুন — সাপ্লায়ার থেকে কপি না করে নিজে লিখলেই ভালো।
- ছবি অপটিমাইজ করুন (অনুকূল সাইজ ও অ্যাল্ট টেক্সট সহ)।
- ব্লগ বা কনটেন্ট দিন — “কীভাবে ব্যবহার করবেন”, “কার বিশ্লেষণ”, “বেস্ট পণ্যের তালিকা” ইত্যাদি কনটেন্ট SEO ও ট্রাফিক বাড়াতে সহায়ক।
পেমেন্ট ও শিপিং সেটআপ
- বাংলাদেশি গ্রাহকদের জন্য ক্যাশ অন ডেলিভারি (COD) অনেক সময় কাজ করে।
- ইন্টারন্যাশনাল সেল করলে পেমেন্ট গেটওয়ে খোঁজার প্রয়োজন হয় (PayPal, Stripe ইত্যাদি), তবে এটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ হতে পারে।
- শিপিং ব্লগিক ঠিক করুন — ডেলিভারি সময়, খরচ, প্যাকেজিং। সময়মতো ডেলিভারি হলে গ্রাহক সন্তুষ্টি বাড়ে।
ধাপ ৫: বিপণন (Marketing) ও ট্রাফিক আনা
সামাজিক মিডিয়া ব্যবহার
- Facebook, Instagram, TikTok — বাংলাদেশে এরা খুব জনপ্রিয়। এখানে আপনার নিশ অনুযায়ী কনটেন্ট দিন।
- লোকাল ভাষায় (বাংলায়) পোস্ট করলে গ্রাহকের সঙ্গে সংযোগ গড়ে ওঠে।
- ইনফ্লুয়েন্সার মার্কেটিং বিবেচনা করুন — মাইক্রো ইনফ্লুয়েন্সারদের সঙ্গে কাজ করে ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায়।
বিজ্ঞাপন (Paid Ads) ও নিরীক্ষণ
- Facebook/Instagram অ্যাড রান করুন — ছোট বাজেট দিয়ে টেস্ট করুন।
- গুগল অ্যাডস বা রিমার্কেটিং এই রকমও কার্যকর হতে পারে।
- ট্র্যাকিং ও এনালাইটিকস স্থাপন করুন — কনভার্সন রেট, ক্লিক থ্রু রেট, রিটার্ন অন ইনভেস্টমেন্ট (ROI) মনিটর করুন।
- কোন পণ্য বিক্রি বেশি হচ্ছে তা দ্রুত শনাক্ত করে সেটি স্কেল করুন।
কনটেন্ট ও ব্লগিং
- আপনার স্টোরে ব্লগ সেকশন রাখুন যেখানে পণ্য-রিভিউ, ব্যবহার কেস, টিপস দেওয়া হবে। এটি SEO দিয়ে ট্রাফিক এনে দেয়।
- “কীভাবে” টাইপ পোস্ট দিন — যেমন “কিভাবে সেরা গ্যাজেট নির্বাচন করবেন”, “বাচ্চাদের জন্য নিরাপদ খেলনা”।
- কনটেন্ট শেয়ার করুন সামাজিক মিডিয়ায় ও গ্রাহক-ইমেইলে।
ধাপ ৬: অর্ডার ব্যবস্থাপনা ও গ্রাহক সাপোর্ট
অর্ডার ফ্লো
- গ্রাহক অর্ডার করলে দ্রুত সাপ্লায়ারকে অর্ডার ফরোয়ার্ড করুন।
- ট্র্যাকিং নম্বর গ্রাহককে দিন যাতে তারা জানেন ডেলিভারি কতদূর।
- স্টক চেক নিয়মিত করুন — “আউট অফ স্টক” পণ্য হলে তা দ্রুত আপডেট করুন।
গ্রাহক সাপোর্ট
- দ্রুত উত্তর দিন, গ্রাহকের সমস্যার সমাধান দ্রুত করুন — সন্তুষ্টি বাড়ে।
- রিটার্ন ও রিফান্ড নীতি স্পষ্ট করুন — এটি বিশ্বাস তৈরি করে।
- ভালো রিভিউ ও গ্রাহক রেফারেন্স সংগ্রহ করুন — এটি নতুন গ্রাহকের বিশ্বাস বাড়ায়।

ধাপ ৭: স্কেলিং ও আয় বাড়ানো
মুনাফা বিশ্লেষণ
- প্রতিটি বিক্রয়ে মুনাফা ঠিক করুন — খরচ বাদে আপনি কত আয় করবেন তা স্পষ্ট করুন।
- পণ্য-ক্যাটেগরিতে উন্নয়ন করুন — যে পণ্য ভালো বিক্রি হয়েছে, তার বিকল্প খোঁজুন।
নতুন বাজার ও আপগ্রেড
- আপনি শুধু বাংলাদেশের বাজারেই সীমাবদ্ধ না থেকে আন্তর্জাতিক বাজারে যেতে পারেন।
- নতুন নিসে প্রবেশ করুন, নতুন পণ্যে লঞ্চ করুন — ঝুঁকি নিয়েই সাফল্য মেলে।
- অটোমেশন টুলস ব্যবহার করুন — 주문, শিপিং, ইনভয়েসিং এমনকি গ্রাহক সাপোর্ট স্বয়ংক্রিয় করার সুযোগ আছে।
রিগুলার বিশ্লেষণ
- আপনার ট্রাফিক সোর্স, কনভার্সন রেট, গ্রাহক রিটেনশন ইত্যাদির ওপর নজর রাখুন।
- দ্রুত কাজ করুন: কোন অ্যাড বা পণ্য কাজ করছে না? বাদ দিন। ভালো কাজ করা অংশকে বাড়ান।
ধাপ ৮: সাধারণ চ্যালেঞ্জ ও সমাধান
ডেলিভারি ধীর বা সমস্যা হয়
বিদেশ থেকে পণ্য এনে দিলে শিপিং সময় বেশি হতে পারে — এই ক্ষেত্রে স্থানীয় সাপ্লায়ার বা দ্রুত ডেলিভারির বিকল্প খোঁজুন।
পেমেন্ট গেটওয়ে সীমাবদ্ধতা
বাংলাদেশ থেকে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে নিয়ে সমস্যা হতে পারে। অন্য বিকল্প যেমন ব্যাংক ট্রান্সফার, স্থানীয় গেটওয়ে বা COD বিবেচনা করুন।
প্রতিদ্বন্দ্বিতা বেশি
অনেকেই এই ব্যবসা করতে চায়, তাই নিজের বৈশিষ্ট্য বা নিজস্ব ব্র্যান্ডিং প্রয়োগ করুন — “বেস্ট সার্ভিস”, “দ্রুত ডেলিভারি”, “বিশ্বাসযোগ্য গ্রাহক সাপোর্ট” ইত্যাদি।
ড্রপশিপিং হলো একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় অনলাইন ব্যবসা — বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে ইনভেস্ট একটু কম হলেও কাজ শুরু করা যায়। তবে সহজ হতে নামেই অর্থ নয়, সফল হতে হলে ভালো পরিকল্পনা, সময়মতো কাজ, গ্রাহককে গুরুত্ব দেওয়া এবং সব সময় স্কেল করার মনোভাব থাকতে হবে।
এই গাইড অনুসরণ করে আপনি নিচ থেকে শুরু করে ধাপে ধাপে উপরে উঠতে পারবেন. আপনার উদ্দেশ্য স্পষ্ট রাখুন, নিস ঠিক করুন, সাপ্লায়ার ভালো করুন, বিপণন চালান এবং ক্রমাগত উন্নতি করুন।
