কি ভাবে ব্লগিং করে টাকা আয় করা যায় ?

আপনি যেহেতু এই আর্টিকেল টা পড়ছেন তার মানে আপনি ব্লগিং করে টাকা ইনকাম করতে চান। আর আজকে আমরা আপনাদের সাথে শেয়ার করব কি ভাবে আপনি ব্লগিগ্ন করে টাকা আয় করতে পারবেন।

আধুনিক এই যুগে ইন্টারনেট শুধু বিনোদন কিংবা কোন ইনফর্মেশন খুজার মাধ্যম নয়। ইন্টারনেট এখন টাকা ইনকাম করার একটি অন্যতম মাধ্যম হিসাবেও পরিচিত। এমন অনেকেই আছেন যারা ব্লগিং কে পেশা হিসেবে নিয়েছে। আবার অনেকে আছে যারা চাকরির পাশা পাশি ব্লগিং করে থাকেন। এখন কথা হলো গিয়ে ব্লগিং করে কি সত্যি টাকা ইনকাম করা যায়, আর যদি সত্যি যায় তাহলে কি ভাবে এবং ক্তচতাকা ইনকাম করা যায়। এমন সকল প্রশ্নের উত্তর পাবেন আমাদের আজকের এই আর্টিকেল এ ।

ব্লগ কি ?

সহজ ভাষায় বলতে গেলে ব্লগ হোল একটা ওয়েবসাইট। যে খানে একটি নির্দিষ্ট ক্যাটাগরি রিলেটেড আর্টিকেল পোস্ট করা হয়ে থাকে। আর এই সকল আর্টিকেল কে ব্লগ পোস্ট বলা হয়। আর এই ব্লগ পোস্ট থেকেই ব্লগিং কথাটি এসেছে। আরও সহজ ভাবে বলতে গেলে ব্লগিং হলো একটি অনলাইন ডায়েরির মতন। যেখানে আপনি আপনার দক্ষতা, জ্ঞান, মতামত ইত্যাদি শেয়ার করতে পারবেন। এইটা হতে পারে কোন টেক্সট এর মাধ্যমে, কোন ইমেজ এর মাধ্যমে  অথবা ভিডিও গ্রাফির মাধ্যমে।

চলুন এখন জেনে নেই আপনি যদি ব্লগিং করতে চান তাহলে কি ভাবে শুরু করবেন একদম বেসিক থেকে জানব।

আপনি কেন ব্লগিং করবেন?

১. ব্লগিং এর মাধ্যমে নিজের জ্ঞান, দক্ষতা , অভিজ্ঞতা ইত্যাদি শেয়ার করা যায়।

২. আপনি আপনার চাকরি বা পরাশুনার পাশাপাশি ব্লগিং করে ইনকাম করতে পারবেন।

৩. আপনি আপনার পছন্দের বিষয় নিয়ে কাজ করতে পারবেন।

৪. আপনি ঘরে বসে ইনকাম শুরু করতে পারবেন ইত্যাদি।

প্রথম কাজঃ ক্যাটাগরি নির্বাচন

ব্লগিং করতে চাইলে সবার প্রথেই আপনাকে নির্বাচন করতে হবে আপনি কোন ক্যাটাগরির ব্লগ সাইট তৈরি করতে চান। মানে হোল আপনি আপনার ওয়েবসাইট এ কোন টপিক সম্পর্কে আর্টিকেল লিখতে চান সেটা নির্বাচন করতে হবে। সেটা হতে পারে টেকনোলজি, খাবার, নিউজ ইত্যাদি।

দ্বিতীয় কাজঃ ব্লগ সাইট/ওয়েবসাইট বানানো

আপনি যেহেতু আপনার ব্লগ এর জন্য ক্যাটাগরি নির্বাচন করেফেলেছেন এখন আপানকে একটি ব্লগ সাইট বা ওয়েবসাইট তৈরি করতে হবে। যে কোন ওয়েবসাইট তৈরি করতে দুটি জিনিশ প্রয়োজন একটি ডোমেইন আর একটি হোস্টিং । এখন আপনি এইতা ফ্রি তেও বানাতে পারেন বা ডোমেইন হোস্টিং কিনেও বানাতে পারেন। যদি ফ্রী তে বানাতে চান তাহলে আপনি গুগল এর ফ্রী ব্লগ ব্যাবহার করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আপনার ওয়েবসাইট এর নাম হবে,

YourWebsitename.Blogspot.com এই ক্ষেত্রে .Blogspot.com থাকবেই যেহেতু এইটা ফ্রী ওয়েবসাইট অথবা আপনি ডোমেইন কিনে নিতে পারেন সেক্ষেত্রে আপনার ওয়েবসাইট হবে YourWebsitename.com কিন্তু আপনি যদি ডোমেইন কিনে নেন তাহলে তার সাথে আপনাকে একটি হোস্টিং ও কিনতে হবে। ধরে নিলাম আপনি একটি ডোমেইন হোস্টিং কিনেছেন এখন কি করবেন ?

তৃতীয় কাজঃ ওয়েবসাইট ডিজাইন

এখন আপনাকে আপনার ওয়েবসাইট টি ডিজাইন করতে হবে আপনি ওয়ার্ডপ্রেস এর মাধমে এই কাজটি করতে পারেন অথবা এইচ টি এম এল কোড এর মাধমেও আপনার ওয়েবসাইট টি ডিজাইন করতে পারেন। আর যদি আপনি নিজে করতে না পারেন তাহলে একজন ওয়েব দেভলপার কে দিয়ে কাজটি করিয়ে নিতে পারেন।

চতুর্থ কাজঃ আর্টিকেল পোস্ট

এখন আপনার একটি ওয়েবসাইট তৈরি হয়ে গেছে এখন আপনাকে এইখানে বিভিন্ন আর্টিকেল পোস্ট করতে হবে। অবশ্যই প্রয়োজনীয় আর্টিকেল লিখবেন যেটা অন্নের উপকারে আসে। কোন ওয়েবসাইট থেকে কপি করে কোন কিছু পোস্ট বা পাবলিশ করবেন না। অন্নের কোন ইমেজ বা ফটো ব্যাবহার করবেন না। আপনি আপনার সাইট এ মিনিমাম ২০-২৫ টা আর্টিকেল পাবলিশ করবেন। আর একটা কথা মনে রাখবেন প্রতি আর্টিকেল যেন ৫০০ ওয়ার্ড এর বেসি হয় আপনি চেষ্টা করবেন ১০০-১২০০ বা তার বেশি ওয়ার্ড ব্যাবহার করে প্রতি টা আর্টিকেল লিখতে।

পঞ্চম কাজঃ এসইও বা সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন

এই পর্যায় আপনাকে আপনার সাইট এর জন্য এসইও করতে হবে। এসইও সাধারণত দুই ধরনের হয়ে থাকে একটি হোল অন পেজ আরেকটি হোল অফ পেজ। আপনার ওয়েবসাইট টা সম্পর্কে সকলকে জানাতে হবে। এসইও করার মাধমে আপনার ওয়েবসাইট টা গুগল সার্চ ইঞ্জিন এ রাঙ্ক করাতে হবে যেন প্রতি দিন বিপুল পরিমান ভিজিটর আপনার ওয়েবসাইট টা ভিজিট করে এবং আপানর আর্টিকেল গুলো পড়ে।

ষষ্ঠ কাজঃ গুগল অ্যাডসেন্স এর জন্য এল্পাই

আপনার ওয়েবসাইট তৈরি আপনার সাইট এ অনেক আর্টিকেল আছে এবং আপানর সাইট এ প্রতি দিন অনেক ভিজিটর আসে তাহলে কি আপনার ইনকাম শুরু হয়ে গেছে? উত্তর হছে না। কারন আপনার ইনকাম হবে বিজ্ঞাপন এর মাধমে। অর্থাৎ আপনার ওয়েবসাইট টা যে কোন অ্যাড নেটওয়ার্ক এর সাথে কানেক্ট করতে হবে। বাংলা ওয়েবসাইট এ বিজ্ঞাপন দেয় এমন অনেক অ্যাড নেটওয়ার্ক আছে তবে এদের মধে সব থেকে বেস্ট হোল গুগল অ্যাডসেন্স । এই পর্যায় এ আপনি গুগল অ্যাডসেন্স এর জন্য আপ্লাই করবেন। আপ্লাই করার পর গুগল আপনার ওয়েবসাইট টা রিভিও করে দেখবে। যদি সব কিছু ঠিক থাকে তাহলে গুগল আপনার ওয়েবসাইট এ অ্যাড শো করার অনুমোদন দিয়ে দিবে। এর পড়ে আপনি গুগল এর অ্যাড কোড আপনার ওয়েবসাইট এ এড করে দিলেই বিজ্ঞাপন চালু হয়ে যাবে। এখন থেকে আপনার ওয়েবসাইট এ যত বেশি ভিজিটর আসবে আপনার তত বেশি ইনকাম হবে।

সর্বশেষ কাজঃ সর্বশেষ কাজ হোল আপনার অর্জিত টাকা গুগল থেকে উত্তলন করা।

আপনার অ্যাকাউন্ট এ ১০০ ডলার হলেই গুগল আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এ টাকা পাঠিয়ে দিবে। তার পর আপনি আপনার ডেবিট কার্ড দিয়ে টাকা এটিম বুথ থেকে তুলতে পারবেন।

কোন কোন উপায়ে ব্লগিং করে আয় করা যায় ?

ব্লগিং করে আয়ের অসখ্য উপায় রয়েছে। নিচে সেগুলো সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো

১. গুগল অ্যাডসেন্স ঃ বর্তমান যুগে বিশ্বে সব থেকে জনপ্রিয় অনলাইন আয়ের মাধ্যম হলো গুগল অ্যাডসেন্স। আপনার ব্লগ এ গুগল অ্যাডসেন্স এর অ্যাড শো করে আপনি ইনকাম করতে পারবেন। তবে গুগল অ্যাডসেন্স কিছু শর্ত রয়েছে। আপনার ব্লগ এ যথেষ্ট পোস্ট থাকতে হবে। গুগল এর সকল পলিসি মানতে হবে এবং ওয়েবসাইট এ ভিজিটর থাকতে হবে।

২. অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং ঃ আপনি চাইলে কোন প্রোডাক্ট সম্পর্কে রিভিও লিখে নিচে সেই প্রোডাক্ট এর অ্যাফিলিয়েট লিংক দিয়ে দিতে পারেন। কেও যদি প্রোডাক্ট টা ক্রয় করে তবে আপনি একটি নির্দিষ্ট পরিমান অর্থ পাবেন।

৩. স্পনসরশিপ ব্লগ পোস্ট ঃ আপনার ওয়েবসাইট এ যখন অনেক বেশি ভিজিটর আসবে। দেখবেন তখন অনেক ভালো ভালো কোম্পানি আপনার ওয়েবসাইট এ তাদের প্রোডাক্ট বা সেবা সম্পর্কে পোস্ট দিতে চাইবে। এর জন্য আপনাকে টাকাও দিবে।

৪. সার্ভিস প্রদান ঃ আপনি যদি এসিও করতে পারেন এবং এসিও কাজ করতে চান তাহলে আপনার ব্লগ এর মাধ্যমে কাজ পেতে পারেন। আবার আপনি চাইলে আপনার ব্লগ কে কাজের নমুনা হিসাবেও দেখাতে পারেন।

৫. প্রোডাক্ট বিক্রি ঃ আপনি আপনার ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে ই-বুক, বা অনলাইন বিভিন্ন ক্লাস ও বিক্রি করতে পারবেন।

আপনি কিভাবে ব্লগিং এ সফল হবেন?

১. আপনি ব্লগিং শুরু করেই ইনকাম এর আসা করবেন না। কারন একটা ব্লগ পপুলার হতে ভিজিটর আনতে এবং গুগল অ্যাডসেন্স অনুমোদন পেতে প্রায় অনেক তাই সময় লেগে যায়। তাই আজকে ব্লগিং শুরু করে কালকে ইনকাম এর আসা করবেন না।

২. প্রতিদিনি বা নিয়মিত আপনাকে ভালো ভালো কন্টেন্ট পোস্ট করতে হবে। কারন আপনি যদি ভালো কন্টেন্ট না দেন তাহলে ভিজিটর আসবে না। আবার যদি নিয়মিত না দেন তবুও দেখবেন আস্তে আস্তে ভিজিটর কমতে থাকতে। তাই ভালো ভালো কন্টেন্ট লিখবেন এবং নিয়মিত আর্টিকেল পোস্ট করার ট্রাই করবেন।

৩. যদি দেখেন যে কোন ভিজিটর আপনার কোন পোস্ট বা আর্টিকেল এ কমেন্ট বা ফিডব্যাক দিয়েছে তাহলে অবশই তাঁর কমেন্ট কে গুরুত্ত দিন। আপনি তাঁর কমেন্ট এর উত্তর দিন। আপনি কি জানেন এটা আপনার এসিওর ক্ষেত্রেও অনেক গুরুত্তপূর্ণ ভুমিকা রাখবে।

৪. নিজের আর্টিকেল নিজেই প্রচার করার চেষ্টা করুন।

৫. আপনি সবসময়য় পপুলার বিষয় নিয়ে আর্টিকেল লিখার চেষ্টা করবেন। এর ফলে খুব দ্রুত ভালো পরিমান ভিজিটর পাবেন আপনার ওয়েবসাইট এ।

৬. আপনাকে অবশই এসইও সম্পর্কে জানতে হবে। কারন এস ই ও ছাড়া আপনি কখনই আপনার ওয়েবসাইট কে রাঙ্ক করাতে পারবেন না গুগল সার্চ ইঞ্জিন এ। তাই কম পক্ষে প্রাথমিক ধারনা আপনার থাক্তেই হবে এস ই ও সম্পর্কে।

৭. সব সময় উনিক আর্টিকেল লিখবেন কখনই অন্য কারো আর্টিকেল থেকে কপি করবেন না। কারন গুগল কপি করলে সেটা ধরে ফেলবে। তাহলে গুগল কখনই আপনাকে গুগল অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্ট দিবে না এবং আপনার ওয়েবসাইট বা সেই আর্টিকেল কখনই গুগল সার্চ ইঞ্জিন এ রাঙ্ক করবে না। তাই সব সময় উনিক পোস্ট লিখবেন ভুলেও কখনো কপি পেস্ট করবেন না।

আপনার যদি একটি সঠিক প্লান থাকে এবং আপনি যদি সেই প্লান অনুযায়ী ধাপে ধাপে কাজ করতে পারেন। তাহলে ব্লগিং হতে পারে একটি উত্তম আয়ের উৎস আপনার জন্য। আপনি একটা দিন দেখবেন যে আপনার ওয়েবসাইট টা একটি ব্রান্ড এ পরিনিত হয়েছে।

আশা করি আপনারা বুজতে পেরেছেন যে কি ভাবে একটি ব্লগ ওয়েবসাইট থেকে ইনকাম করা যায়। তার পরও যদি আপনার কোন কিছু বুজতে অসুবিধা হয় কিংবা কোন কিছু জানার থাকে অবশই এই পোস্ট এর কমেন্ট এ জানাবেন। আপনি ১০০% ট্রাই করব আপনাদের প্রবলেম সমাধান করতে বা আপনাদের সকল প্রশনের উত্তর দিতে। দেখা হবে পরের আর্টিকেল এ সেই পর্যন্ত সকলেই ভালো থাকুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *