Quick Response থেকে QR শব্দটি এসেছে। এটি সাধারণত বর্গক্ষেত্রের মতো ছোট ছোট বিন্দুতে সাজানো থাকে ২ডি বারকোড। QR Code সর্বপ্রথম ১৯৯৪ সালে জাপানের ডেনসো ওয়েব দ্বারা তৈরি করা হয়েছিল। এটি যে কোন স্মার্ট ফোন দিয়ে খুব তারাতারি স্কান করা যায়। এটি সাধারণত ডাটা সংরক্ষণ করার জন্য ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। বরতমানে QR Code বিভিন্ন জায়গায় ব্যাবহার করা হছে। এখন আপনি চাইলে এর মাধমে আপনার ওয়াইফাই পাসওয়ার্ড শেয়ার করতে পারবেন।

আপনি এই কোড স্কান করে কোন পেমেন্ট করতে পারবেন। এর মাধমে যে কোন ডাটা বা ইনফর্মেশন আপনি খুব সহজেই শেয়ার করতে পারবেন। বর্তমানে যে কোন পেমেন্ট থেকে শুরু করে, ওয়েবসাইট ভিজিট এর লিংক, মেনু দেখা, যে কোন প্রকার অ্যাপ ডাউনলোড এর লিঙ্ক ও এখন কিউআর কোড ব্যাবহার করা হয়। আজকে আমরা এর ইতিহাস, ব্যাবহার গুরুত্ত সব কিছুই জানব এই আর্টিকেল এর মাধমে। তো চলুন আর বিস্তারিত জেনে নেই।
QR Code কি ?
QR Code হলো একটি বারকোড এটি খুব দ্রুত যে কোন ডাটা ডিকোড এবং এনকোড করার জন্যই আবিস্কার করা হয়েছে। বর্তমানে এর ব্যাপক ব্যবহার হছে। কিউআর কোড একটি দ্বিমাত্রিক বারকোড যা স্কান করে এর বিভিন্ন ইনফর্মেশন খুব সহজেই দেখতে পারবেন। এর মাধমে আপনি ফোন নাম্বার, ইমেইল, ওয়েবসাইট লিঙ্ক যে কন কিছুই শেয়ার করতে পারবেন।
QR কোড এর পূর্ণরূপ কি?
QR কোড এর মূলত সুনির্দিষ্ট কোন পূর্ণরূপ নেই। এটি মূলত Quick Response সংক্ষিপ্ত রুপ হিসেবেই বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তবে Quick Response ছারাও QR কোড এর আরও বেশ কিছু নাম প্রচলিত রয়েছে। যেমন- কুইক রিডিং, কুইক রেজোলিউশন এবং কুইক রিটার্ন। তবে QR কোড হিসেবেই সবার কাছে এটা বেশি পরিচিত। এই নামেই সকলে সহজেই চিনতে পারে।
QR কোড এর বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি ?
QR কোড এর মূলত ৩টা প্রধান বৈশিষ্ট্য রয়েছে। বৈশিষ্ট্য গুলো হলো-
১. দ্রুত স্কান করা যায় ঃ QR কোড খুব দ্রুত এবং খুব সহজেই যে কোন স্মার্ট ফোন দিয়ে স্কান করা যায়।
২. বহু তথ্য ধারন করতে সখমঃ QR কোড বিপুল পরিমান তথ্য ধারন করতে পারে প্রায় ৪,২৯৬ টি অক্ষর অথবা ৭,০৮৯ টি সংখ্যা ধারন করতে পারে।
৩. তথ্য পুনরুদ্ধার করা যায়ঃ QR কোড এর কিছু অংশ যদি নষ্ট হয়েও যায় তার পরেও QR কোড থেকে ডাটা বা তথ্য পুনরুদ্ধার করা যায়।
উপরের বৈশিষ্ট্য ছারাও QR কোড এর আরও বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে।
কিউআর কোড এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস
কিউআর কোড কবে সর্ব প্রথম আবিষ্কার হয়েছে জানেন, ১৯৯৪ সালে সর্ব প্রথম জাপানের একটি প্রতিষ্ঠান ড্যান্সও ওয়েব এর মাধমে কিউআর কোড আবিষ্কার হয়েছিল। তখন এইতা ব্যাবহার করা হত টয়েটা গারির বিভিন্ন অংশ গুল ট্র্যাক করার জন্য। পরবর্তীতে কিউআর কোড আস্তে আস্তে বিভিন্ন বিজনেস ও প্রযুক্তিতে ব্যাবহার করা শুরু হয়। আর এখন এই কিউআর কোড সবার কাছে খুব প্রচলিত হয়ে উঠেছে। যদিও এর প্যাটেন্ট রয়েছে ড্যান্সও ওয়েব কম্পানির কাছে।
QR কোড কাজ করে কি ভাবে ?
QR কোড এর বর্গক্ষেত্রর মধে যে ছোট ছোট বিন্দু গুলো সাজানো থাকে তাকে “কোড মডিউল” বলা হয়ে থাকে। QR কোড এর মধ্যে যে সকল তথ্য বা ডাটা থাকে সেটা এই কোড মডিউল এর প্যাটার্ন এর মধ্যে এনকোড করা থাকে। যখন কোন QR কোড স্কানার দিয়ে বা স্মার্ট ফোন দিয়ে এই QR কোড টা স্কান করা হয় তখন QR কোড স্কানার কোড মডিউল এর প্যাটার্ন পড়ে ডাটা বা তথ্য ডিকোড করে থাকে।
QR কোড এর ধরন কয়টা এবং কি কি ?
বর্তমানে QR কোড সাধারণত দুই ধরনের দেখা যায়। স্ট্যাটিক QR কোড এবং ডাইনামিক QR কোড। চলুন এই দুই ধরনের QR কোড সম্পর্কে একটু জেনে নেই।
১. স্ট্যাটিক QR কোডঃ স্ট্যাটিক QR কোড এর একটি প্রবলেম হোল স্ট্যাটিক QR কোড যদি একবার তৈরি করা হয় তবে সেটা আর পরিবর্তন করা বা আপডেট করা যায় না। এই স্ট্যাটিক QR কোড সাধারণত ওয়েবসাইট, টেক্সট কিংবা ইমেইল ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।
২. ডাইনামিক QR কোডঃ অপর দিকে ডাইনামিক QR কোড একবার তৈরি করার পরেও আপনি চাইলে সেটা পরিবর্তন বা আপডেট করতে পারবেন যে কোন সময়ে। এই ডাইনামিক QR কোড গুলো সাধারণত কোন পণ্য সম্পর্কে তথ্য বা বিভিন্ন ইভেন্ট সম্পর্কে তথ্য কিংবা পরিবর্তনশীল এমন সকল ক্ষেত্রে ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।

QR কোড কথায় কথায় ব্যাবহার হয় ?
বর্তমানে QR কোড অনেক বেশি জনপ্রিয়। এর বহুবিদ ব্যাবহার রয়েছে বর্তমানে। নিম্নে সেগুলো আলোচনা করা হলো-
১. পণ্য ট্র্যাকিংঃ বর্তমানে পণ্যের বিভিন্ন তথ্যর জন্য QR কোড ব্যাবহার করা হয়ে থাকে। যেমন- পণ্যের উৎপাদন এর তারিখ, পণ্যের মেয়াদ শেষ হবার তারিখ, পণ্যের উৎপত্তি, পণ্যের মালিকানার ইনফর্মেশন ইত্যাদি।
২. পণ্য বিপণন ঃ QR কোড ব্যাবহার করে পণ্যের ক্রেতাদের ওয়েবসাইট এ, ভিডিও তে বা অন্যান ডিজিটাল মাধ্যমে নিয়ে যাওয়া যায় খুব সহজেই।
৩. বিভিন্ন টিকিট ঃ বর্তমানে ট্রেন এর টিকেট, এয়ার টিকেট ইত্যাদি ক্ষেত্রেও QR কোড ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।
৪. যে কোন পেমেন্ট ঃ বর্তমানে QR কোড ব্যাবহার করে যে কোন শপিং মলে আপনি পেমেন্ট করতে পারবেন খুব সহজেই। আপনার হাতে থাকা স্মার্ট ফোন টা দিয়ে QR কোড স্কান করে।
৫. শিক্ষা ঃ বর্তমানে শিক্ষার্থীদের উত্তর পত্রেও QR কোড ব্যাবহার করা হয়ে থাকে।
৬. স্বাস্থ্যসেবা ঃ সাস্থসেবার ক্ষেত্রেও এখন QR কোড ব্যাবহার করা হছে। রোগীর চিকিৎসা তথ্য সংগ্রহ করার জন্য ।
৭। ভিজিটিং কার্ড ঃ বিজনেস এর পরিচয় পত্র বা ভিজিটিং কার্ড এও এখন কিউআর কোড এর ব্যাবহার লক্ষ্য করা যায়।
কিউআর কোড ব্যাবহার এর সতর্কতা ঃ
যদিও কিউআর কোড ব্যাবহার করার বহু সুবিধা রয়েছে। তার পরও এই কিউআর কোড ব্যাবহার এর ক্ষেত্রে কিছু সান্ধানতা অবলম্বন করা এক্তান্তই জরুরি। নিচে সেগুল সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো
১। আপনি কখনি অচেনা কোন কিউআর কোড স্কান করবেন না । কারন আপনি জানেন না এর মধে কি রয়েছে।
২। যে কোন কিউআর কোড স্কান করার পূর্বে অবশই নিশ্চিত হয়ে নিবেন যে এই কিউআর কোড টা বিশ্বস্ত কোন সোর্স থেকে এসেছে।
৩। যদি কখনও দেখেন যে কোন কিউআর কোড স্কান করার পরে সন্দেহজনক কোন ওয়েবসাইট লোড হছে তাহলে সাথে সাথে সেটা বন্ধ করে দিন।
কারন অনেক সময় দেখা যায় যে বিভিন্ন হ্যাকার রা ভুয়া কিছু কিউআর কোড দিয়ে আপনার অতি মূল্য বান তথ্য চুরি করে নিয়ে যায়। তাই যে কোন কিউআর কোড ব্যাবহার এর ক্ষেত্রে অবশই সর্তক ভাবে স্কান করবেন।
আপনি কি করে QR কোড তৈরি করবেন ?
আপনি চাইলে অনলাইন থেকে বিনা খরচে QR কোড তৈরি করতে পারবেন খুব সহজেই। QR কোড তৈরি করার ক্ষেত্রে আপনি যে সকল তথ্য QR কোড এ সংরক্ষণ করতে চান সেই সকল তথ্য দিয়ে QR কোড তৈরি করতে হবে। তৈরি হয়ে গেলে আপনি সেটা ডাউনলোড করে প্রিন্ট বা ইমেজ শেয়ার করতে পারবেন।
কিউআর কোড ব্যাবহার এর কি কি সুবিধা রয়েছে ?
কিউআর কোড ব্যাবহার এর বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে নিচে তা সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো ঃ
১। কিউআর কোড এর মাধমে খুব দ্রুত কাজ করা যায়। যেমন আপনি কিউআর কোড স্কান করে আপনি খুব দ্রুত যে কোন তথ্য স্কান করতে পারবেন।
২। কিউআর কোড ব্যাবহার করাও খুবি সহজ। আপনি যে কোন স্মার্ট ফোন দিয়ে কিউআর কোড স্কান করতে পারবেন।
৩। আপনি যদি কিউআর কোড এর মাধমে কোন তথ্য আদান প্রদান করে থাকেন তাহলে জানেন যে এইটা কতটা নিরাপদ।
৪। কিউআর কোড ব্যাবহার আস্তে আস্তে কাগজের ব্যাবহার কমিয়ে দিছে। বলতে পারেন কিউআর কোড ব্যাবহার ইকো ফ্রেন্ডলি ।
৫। আপনি অনেক তথ্য এই ক্ষুদ্র কিউআর কোড এর মাধমে শেয়ার করতে পারবেন খুব সহজেই।

কিউআর কোড এর ভবিষ্যৎ ব্যাবহার ঃ
১। ভবিষ্যৎ এ কিউআর কোড বাস, ট্রেন, ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাবহার হবে।
২। আপনি দেখবেন কিউআর কোড ভবিষ্যৎ এ ডিজিটাল পরিচয় পত্রর খেত্রেও দেখা যাবে।
৩। আবার এমনও হতে পারে যে ডক্টর এর প্রেসক্রিপশন, রিপোর্ট, ইত্যাদি খেত্রেও কিউআর কোড এর ব্যাবহার দেখা যেতে পারে।
৪। এখন যেমন আমরা কোন কিছু ক্রয় করলে পাকেট এর উপর উৎপাদন এর তারিখ, মূল্য, মেয়াদ শেষ এর তারিখ লিখা থাকে। ভবিষ্যৎ এ এই সব তথ্য এর জন্য কিউআর কোড ব্যাবহার করা হবে। অর্থাৎ এর ব্যাবহার এখন কার থেকে আরও বহু গুল বেরে যাবে।
কিউআর কোড যদিও খুবি ছোট কিন্তু এইতা আমাদের জিবনে এক বিশাল বিপ্লপ ঘটিয়েছে। কিউআর কোড যে আমাদের কাজের ক্ষেত্রে সময় বাচিয়েছে শুধু তাই নয়, এতা যে কোন তথ্য আদান-প্রদান এর ক্ষেত্রে আনে দিয়েছে এক বিশাল নিরাপত্তা। আপনি আজ পর্যন্ত কোন ক্ষেত্রে সব থেকে বেশি কিউআর কোড স্কান করেছেন কমেন্ট করে জানাবেন। আর এর পরও যদি QR কোড নিয়ে আপনাদের কোন কিছু জানার থাকে তাহলে কমেন্ট এ জানাবেন আমরা আপনার প্রশ্নের উত্তর দেয়ার চেষ্টা করব। আপনাদের যদি অন্য কোন বিষয় সম্পর্কে জানতে ইছে করে সেটাও আমাদের কমেন্ট করে জানাতে পারেন। আমরা সেই বিষয়ে নিয়ে হাজির হয়ে যাব আপনাদের জন্য। তাহলে আজকে এই পর্যন্তই।
ধন্যবাদ সকলকে।